বাংলাদেশের মানুষের ভোটাধিকার এবং দেশ বাঁচাতে লড়াই করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গুরুতর অসুস্থ সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে যান গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা। এ সময় খালেদা জিয়া তাদের একথা বলেন বলে জানান মঞ্চের নেতারা। সাত মিনিটের মতো তার সঙ্গে কথা বলেন গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা। তার শারীরিক অবস্থার খোঁজ খবর নেন। পরে আধা ঘন্টা চিকিৎসকদের সঙ্গেও তারা কথা বলেন।
গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের মধ্যে ছিলেন জেএসডি সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণ সংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহবায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম।
হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের জোনায়েদ সাকী জানান, উনার (খালেদা জিয়া) শারীরিক অবস্থা বেশ জটিল ও গুরুতর। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, উনার যে সমস্যা বাংলাদেশে সর্বোচ্চ চিকিৎসা পাচ্ছেন। কিন্তু সার্বিক যে অবস্থা, বিশেষ করে লিভারের অবস্থা তা থেকে নিরাময়ের চিকিৎসা বাংলাদেশে নেই। ফলে উনাকে বাঁচিয়ে রাখার ক্ষেত্রে বিদেশে চিকিৎসা খুবই জরুরি। আমরা মনে করি প্রতিটি নাগরিকের চিকিৎসা পাওয়া তার অধিকার। আইনের কোথাও লেখা নেই উনি বিদেশে যেতে পারবেন না। এর আগে কারাবন্দি অবস্থায় বিদেশে চিকিৎসার অনেক উদাহরণ আছে। খোদ জেএসডি সভাপতি আসম আব্দুর রবও কারাবন্দি অবস্থায় বিদেশে চিকিৎসা করেছেন। আমরা মনে করি, বেগম খালেদা জিয়া দেশের একজন সিনিয়র নাগরিক, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন। সব অর্থেই তার বিদেশে চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার আছে। এটা মানবাধিকারের মধ্যে পড়ে।
তিনি বলেন, আমাদের নেতৃবৃন্দ বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তাকে (খালেদা জিয়া) কিছুটা জানিয়েছেন। তিনি যেটা বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকারের জন্য লড়াই করতে হবে এবং দেশটাকে বাঁচাতে হবে। আমরা জানিয়েছি যে, আমরা রাজপথে ভোটের অধিকারের জন্য ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য, বাংলাদেশের পুরো শাসন ব্যবস্থা বদলে একটা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ করার জন্য একটি অন্তবর্তী সরকারের জন্য লড়াই করছি।
মাহমুদুর রহমান মান্না জানান, উনি (খালেদা জিয়া) ওই রকম কোনো অবস্থায় নেই যে, রাজনীতি নিয়ে কথা বলবেন। আমরা বাইরের সার্বিক অবস্থা বলেছি, আমরা যে এক দফার আন্দোলন করছি এবং সামনের মাস থেকে আরো শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করব। উনি বলেছেন, আপনারা বাইরে যারা যারা আছেন, সবাই মিলে করেন। আপনাদের দেখতে চাই আপনারা আন্দোলন করছেন। এই আন্দোলন তো করতে হবে। আন্দোলনের প্রতি তার সমর্থণ আছে।
তিনি বলেন, আমাদের সমন্বয়কারী বলেছিলেন, এখন সরকার একটি নির্বাচনী জাল বিছানোর চেষ্টা করেছে-যাতে এই নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে পারে। আমাদের এই নির্বাচনে পা দেওয়া চলবে না। এটাকে উনি দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে বলেছেন কোনো অবস্থাতেই এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন করা যাবে না-এ কথা তিনি বলেছেন।
শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন। চিকিৎসকরা আমাদের জানিয়েছেন, বিদেশে নিয়ে গিয়ে উনার লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই। চিকিৎসক ও বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে কথা বলে তা বুঝতে পেরেছি, তার নাগরিক ও সাংবিধানিক অধিকার বিদেশে চিকিৎসার। সরকারের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি দ্রুত সম্ভব তাকে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দেওয়ার।
হাসনাত কাইয়ুম বলেন, বেগম খালেদা জিয়া আরেকটা কথা বলেছেন, দেশকে রক্ষা করার জন্য আন্দোলনটা লাগবে। দেশকে বাঁচালে হলে এই আন্দোলনে বিজয়ই হতে হবে-এর বিকল্প নেই।
৭৮ বছর বয়সি খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, অস্টিও আর্থ্রাইটিস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্রে জটিলতা, ফুসফুস, চোখ ও দাঁতের নানা সমস্যায় ভুগছেন। এছাড়া তার মেরুদণ্ড, ঘাড়, হাত ও হাঁটুতে বাতের সমস্যাসহ আরও কিছু শারীরিক জটিলতা রয়েছে। ২০২১ সালের এপ্রিলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে কয়েকবার নানা অসুস্থতার কারণে তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে।
গত বছরের জুনে বুকে ব্যথা অনুভব করলে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। চলতি বছরের ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সে সময় হাসপাতালে পাঁচ দিন চিকিৎসা শেষে তাকে বাসায় নিয়ে আসা হয়। সর্বশেষ ৯ আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে আবারো এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

 
                         
                                         
                                         
                                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                